চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলাচর এলাকায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই শুরু হয় ভাঙন।উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব দিকে মেঘনা নদী আর পশ্চিমে প্রমত্তা পদ্মা। পদ্মা-মেঘনার ভাঙ্গনে প্রায় প্রতিবছরই রাজরাজেশ্বরের কোন গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়নের মূল ভূখণ্ডের মাঝখান দিয়েও সর্বনাশা পদ্মা আঘাত হেনে শিলারচর ও চিরারচর গ্রামকে আলাদা করে দিয়েছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে প্রমত্তা পদ্মার স্রোতে গত কদিনের ভাঙ্গনে বহু পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে শিলারচর ও বলাশিয়া গ্রামের গুচ্ছগ্রাম। শিলারচর গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গন আতঙ্কের মধ্যেই দিনযাপন করছে। আবার অনেকের বসত ভিটা ভেঙ্গে গেছে নদী গর্ভে।
স্থানীয়রা জানায়, ২০২০ সালেও বড় ধরণের ভাঙনের মুখে পড়ে শিলারচর এলাকাটি। তখন ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ৩ তলা পাকা নতুন ভবন পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। একই সাথে বসতবাড়ী হারায় শতাধিক পরিবার। বর্তমানে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার এই এলাকায় বসবাস করছে। কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন, কেটে নিচ্ছেন জমির গাছপালা। এদের কেউ কেউ একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।
ভাঙনের শিকার শুক্কুর ঢালীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, অন্য কোথাও জায়গাজমি না থাকায় আপাতত অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙন বেড়ে যায়। তাই নদী ভাঙন রোধের স্থায়ী একটা ব্যবস্থা চান তারা। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আবু হানিফ প্রধানিয়া বলেন, আগেও নদীতে বাড়ি ভাঙছে। আবারো গাঙে পানি বাইড়া বাড়ি ভাইঙা গেলো। দুই দিন হইলো অন্যের জায়গায় ঘর তুলছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আহমদ বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙনে ইউনিয়নের ৬ টি ওয়ার্ডই নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। নদীর স্রোত এবং অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করার কারণে আমরা ভাঙন হুমকিতে। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয় আমরা কোথায় আশ্রয় নিব।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, আমাদের ৩৮ বর্গকিলোমিটার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন শিলাচর গ্রামের ৩শতাধিক বসতভিটা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন দুইটি গণকবরস্থান, দুইটি মসজিদ, একটি ঈদগা ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন হুমকিতে বলাশিয়া গুচ্ছ গ্রাম। সেখানে শত পরিবারের বসবাস। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ বলেন, আমরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি আমাকে চেয়ারম্যান লিখিত জানিয়েছেন। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করেছেন। স্থানটি ৩ নদীর মোহনা এবং ভাঙন প্রতিরোধ টেকনিক্যাল বিষয় হওয়ায় আমি বেশী কিছু বলতে পারছি না।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি কমিটি পদ্মার ভাঙনসহ ৩ নদীর মোহনা রক্ষায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্টাডি করেছেন। তাদের রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়েছেন। এখন তাদের স্টাডির বিষয়টি যাচাই বাছাই করার জন্য আমাদের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডাবিøউএম) দ্রুত সার্ভে করতে আসবেন। তিনি আরো বলেন, কারিগরি কমিটিসহ ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের সাথে আলাপ করে এবং সঙ্গে থেকে আমি বুঝতে পেরেছি ইচ্ছে করলেই হঠাৎ পদ্মার ওই অংশের ভাঙন প্রতিরোধ করা যাবে না। কারণ ওখানে প্রতিরোধ করলে তার প্রভাব চাঁদপুর শহরের মোলহেডে এসে পড়বে। এছাড়াও এর আগেই চাঁদপুর শহরের বিপরীতের চরগুলো অপসারণ করতে হবে।